নদীর ঘাটের কাছে
নৌকো বাঁধা আছে,
নাইতে যখন যাই, দেখি সে
জলের ঢেউয়ে নাচে।
আজ গিয়ে সেইখানে
দেখি দূরের পানে
মাঝনদীতে নৌকো, কোথায়
চলে ভাঁটার টানে।
জানি না কোন দেশে
পৌছে যাবে শেষে,
সেখানেতে কেমন মানুষ থাকে কেমন বেশে।
থাকি ঘরের কোণে,
সাধ জাগে মোর মনে,
অমনি করে যাই ভেসে, ভাই,
নতুন নগর বনে।
দূর সাগরের পারে,
জলের ধারে ধারে,
নারিকেলের বনগুলি সব
দাঁড়িয়ে সারে সারে।
পাহাড়-চূড়া সাজে
নীল আকাশের মাঝে,
বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া
কেউ তা পারে না-যে।
কোন সে বনের তলে
নতুন ফুলে ফলে
নতুন নতুন পশু কত
বেড়ায় দলে দলে।
কত রাতের শেষে
নৌকো যে যায় ভেসে।
বাবা কেন আপিসে যায়,
যায় না নতুন দেশে?
ভাঁটা - চাঁদ ও সূর্যের শক্তির আকর্ষণে সমুদ্র বা নদীতে পানি বেড়ে যায়। একে বলে জোয়ার। এ পানি কমে যাওয়াকে বলা হয় ভাঁটা।
আপিস - অফিস শব্দের একটি কথ্য রূপ।
শিক্ষার্থীর অনুসন্ধিৎসা, কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা জাগ্রত করা।
কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সহজ পাঠ' গ্রন্থের প্রথম ভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে। এ কবিতায় অজানাকে জানার সীমাহীন কৌতূহল এবং প্রকৃতির সকল রহস্য উন্মোচন করার অপার আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশিত হয়েছে। ভাঁটার টানে ঘাটে বাঁধা নৌকা মাঝ নদী পেরিয়ে কোথায় গিয়ে যে পৌঁছবে তার কোনো ঠিক নেই। হয়তো কোনো নতুন দেশে বা নতুন পরিবেশে গিয়ে সে পৌঁছবে। এ সব প্রশ্নের উত্তর জানতে কৌতূহল জাগবে যে কারোরই। হয়তো কোনো অসীম সৌন্দর্য, অজানা আনন্দ বা অপার বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অজানার প্রতি এই ব্যাকুলতা শিশুরা তার আশপাশের সবার মধ্যেও দেখতে চায়।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে 'বিশ্বকবি' অভিধায় অভিহিত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর চতুর্দশতম সন্তান।
আধুনিক বাংলা কবিতার ধারায় নতুন যুগের প্রবর্তক তিনি। পনেরো বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'বনফুল'। 'গীতাঞ্জলি' এবং তাঁর আরও কিছু কবিতার স্ব-অনূদিত কাব্যগ্রন্থ 'Song Offerings' -এর জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। 'মানসী', 'সোনার তরী', 'চিত্রা', 'ক্ষণিকা', 'বলাকা' তাঁর অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। ছোটদের জন্য রচনা করেছেন 'শিশু', 'শিশু ভোলানাথ', 'খাপছাড়া' প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ।
বাংলা ছোটগল্প প্রথম তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কবিতা, ছোটগল্প ছাড়াও উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সংগীত, ভ্রমণকাহিনি- বাংলা সাহিত্যের সকল শাখা তাঁর অঢেল দানে সমৃদ্ধ হয়েছে। ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ ও চিত্রকলাতেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।
অনন্যসাধারণ প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ একাধারে সাহিত্যিক, চিন্তক, শিক্ষা-সংগঠক, সুরকার, গীতিকার, নাট্যকার, নাট্যপ্রযোজক, অভিনেতা, অনবদ্য চিত্রশিল্পী। এছাড়া তিনি 'শান্তিনিকেতন' ও 'বিশ্বভারতী'র মতো নতুন ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ক. তোমার কল্পনার দেশের একটি বর্ণনা প্রস্তুত কর।
খ. তোমার এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
গ. সর্বশেষ তুমি যে অঞ্চলে ভ্রমণ করেছ তার বর্ণনা লেখ।
১. জলের ধারে কী দাঁড়িয়ে আছে?
ক. নতুন নগর
খ. পাহাড় চূড়া
গ. নারিকেল বন
ঘ. নতুন পশু
২. "অমনি করে যাই ভেসে, ভাই/ নতুন নগর বনে।" -এখানে কী প্রকাশ পেয়েছে?
i. অসীম সৌন্দর্য
ii. অজানা আনন্দ
iii. অপার বিস্ময়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।
৩. উদ্দীপকের সঙ্গে 'নতুন দেশ' কবিতার কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. সীমাহীন কৌতূহল
খ. প্রকৃতির রহস্য
গ. অজানাকে জানা
ঘ. অপার আকাঙ্ক্ষা
8. উক্ত দিকটি 'নতুন দেশ' কবিতার কোন অংশে প্রতিফলিত হয়েছে?
ক. জানি না কোন দেশে / পৌঁছে যাবে শেষে
খ. থাকি ঘরের কোণে / সাধ জাগে মোর মনে
গ. পাহাড়-চূড়া সাজে / নীল আকাশের মাঝে
ঘ. দূর সাগরের পারে / জলের ধারে ধারে
১. শীতের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে হৃদিতা বেড়াতে যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সেখানকার সামুদ্রিক প্রবাল, সারি সারি নারিকেল গাছ, মাছ ধরার বড়ো বড়ো নৌকা ওর মনে কৌতূহল জাগায়। দিগন্ত বিস্তৃত নীলাভজলরাশি, পরিষ্কার আকাশ ওকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। ওর ইচ্ছে হয় সমুদ্রের নানা রঙের মাছের সঙ্গে খেলা করতে আবার কখনো বা আকাশে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতে।
ক. নীল আকাশের মাঝে কী সাজে?
খ. 'থাকি ঘরের কোণে' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্যে 'নতুন দেশ' কবিতায় চিত্রিত কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? -ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকটি যেন 'নতুন দেশ' কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে।"- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
common.read_more